ডেস্ক নিউজ: কৃষকদের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো কুলাকানি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি। কৃষকরা এই সমিতিতে প্রতি মাসে ১০ টাকা করে জমা রাখতেন ভালো কিছুর প্রত্যাশায়। তবে কৃষকদের সেই কষ্টের টাকাই মেরে খাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তিলেতিলে জমানো কয়েক’শ কৃষককের সেই ‘সম্বল’ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ব্যাংক থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে উত্তোলন করা হয়েছে ৫ লাখ ১৬ হাজার ৪শ ৬৬ টাকা।
সমিতির সদস্য কৃষকদের অভিযোগ, ওই সমিতিরি সদ্য সাবেক সভাপতি কামরুল হক মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দিন গোপনে এই টাকা আত্মসাৎ করতে চেয়েছিলেন। তবে বিষয়টি টের পেয়ে সমিতির ৮জন সদস্য জেলা সমবায় কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। পরে ঘটনাটির তদন্ত শুরু হলে অভিযুক্তরা এখন সেই টাকা ফেরত দিবেন বলে সমবায় কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। কৃষকদের অভিযোগের পর ওই সমিতির পদ থেকে গত ডিসেম্বরে অভিযুক্তরা সরে গেছেন বলে জানা যায়। বর্তমানে জেলা সমবায় কার্যালয়ের একজন পরিদর্শককে এই সমিতির আহবায়ক করা হয়েছে।
জানা যায়, ২০০০ সালের ১ জুলাই উপজেলার রায়কোট ইউনিয়নের ৬টি গ্রামের ৭শ ৮৯ জন সদস্য নিয়ে কুলাকানি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি গঠিত হয়। ২০০৪ সালের ২৮ জুলাই সমিতিটি সমবায় অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রেশন ভুক্ত হয়। ডাকাতিয়া নদী বেষ্টিত ওই ৬টি গ্রামের ফসল রক্ষা, মৎস্য ও কৃষি উন্নয়নে ভূমিকা রাখা ছিলো ওই সমিতির মূল উদ্দেশ্য।
ওই সমিতিরি সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলমের অভিযোগ, সদ্য সাবেক সভাপতি কামরুল হক মজুমদার ও সহ-সভাপতি কবির হোসেন ২০১৮ সালে আমাকে বলে কৃষকদের এই টাকা দিয়ে গরুর ব্যবসা করবে। কিন্তু আমি তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তারা আমাকে গোপনে বাদ দিয়ে অবৈধভাবে মাঈন উদ্দিন মেম্বারকে সাধারণ সম্পাদক বানায়। এরপর এই তিনজন মিলে নিয়মবহির্ভূতভাবে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে। গত বছরের শেষের দিকে বিষয়টি জানতে পেরে আমরা ৮জন জেলা সমবায় কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করি। পরে এনিয়ে তদন্ত হলে ঘটনার সত্যতা পান তারা। পরে গত বছরের ডিসেম্বরে এনিয়ে জেলা সমবায় অফিসে শুনানি হলে তারা টাকা ফেরত দেবেন বলে জানান। কিন্তু প্রায় তিন বছর কৃষকদের টাকা ভোগ করলেও কোন লাভ দেবেন না তারা।
সমিতির সদস্য মাওলানা ইস্রাফিল বলেন, তারা মূলত চেয়েছিলো পুরো টাকাই মেরে খেতে। এখন নিজেদের বাঁচানোর জন্য টাকা ফেরত দেবে বলছে। তারা শত শত কৃষকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তাদের বিচার হওয়া উচিত। চলতি বছরের ১০ মার্চ টাকা ফেরত দেবে বললেও এখন সমিতির টাকা ফেরত দেয়নি তারা।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত কামরুল হক মজুমদার বলেন, আমরা কোন টাকা আত্মসাৎ করিনি। যারা এসব বলছেন তারা মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। ওই টাকা সকলের সিদ্ধান্তে ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। গ্রহীতারা সেই টাকা পরিশোধ করে দিচ্ছেন। আমি নিজে কোন ঋণ নেইনি। আর ঋণগ্রহীতারা সমস্যায় থাকায় লাভের টাকা ছাড় দেওয়ার জন্য সমবায় কর্মকর্তার কাছে অনুরোধ করেছেন। আমার বিরুদ্ধে করা এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা সমবায় কর্মকর্তা মো.আল আমিন বলেন, সদস্যদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমাদের তদন্তে টাকা আত্মসাতের প্রমাণ না পেলেও নিয়মবহির্ভূতভাবে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের সত্যতা পেয়েছি। কারণ নিয়মানুযায়ী সমিতির কোন সদস্য ঋণ নিতে পারেন না। আমাদের তদন্তের পর এনিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হলে সেখানে সাবেক সহ-সভাপতি কবির হোসেন ২ লাখ ৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। আর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দিন মার্চের ১০ তারিখের মধ্যে বাকি তিন লাখ টাকা পরিশোধ করবেন মর্মে আমাদেরকে চেক দিয়েছেন। কিন্তু আমরা এখনো টাকা পাইনি, তিনি আরও কিছুদিন সময় চেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা না দিলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। আমাদের কার্যালয়ের পরিদর্শক মেজবাহ উদ্দিনকে ওই সমিতির আহবায়ক করা হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি করে দেওয়া হবে। আর আসল টাকা সমিতির অ্যাকাউন্টে জমা হলে লভ্যাংশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।