বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন:
আসলে এখন আর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কোনো রকম কনসার্ন দেখাতে আগ্রহবোধ করি না। আবার কিছু না বলেও পারি না। এটিই হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কনসার্ন দেখিয়ে আমার শেষ লেখা।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় একটি রাষ্টের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে রাষ্ট্র ও এর জনগণের প্রতি আমাদের বেশ দায়বদ্ধতার জায়গা রয়েছে। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ইনোভেশন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইত্যাদি বিভিন্ন সেক্টরে অবদান রেখে আমাদের দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। তথাপি বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে দেশ ও জাতির জন্য প্রস্তুত করে। এখন কথা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় নিজেদের প্রস্তুত করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশটা শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে কিনা? কথায় আছে, মেষের নেতৃত্বে থাকা সিংহের পালের বিপরীতে সিংহের নেতৃত্বে থাকা মেষপালের দল জয়ী হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে থাকা প্রশাসনের উপরই নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়টা কতদূর এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের মোস্ট সম্ভাবনাময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। দ্বিতীয় স্বাধীনোত্তর বাংলাদেশে এসে আমরা নতুন করে স্বপ্ন দেখছি, নতুন প্রশাসনও পেলাম। কিন্তু আদৌ দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি?
১/ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মাত্র ক্যাফেটারিয়ায় বাইরের লোকেরা এসে জাস্ট ব্যবসা করে যাচ্ছে। আমরা তো জানতাম, বিশ্ববিদ্যালয় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান! দীর্ঘদিন ধরে খাবারের অসুবিধায় ভোগছি আমরা, বার বার নিউজও হয়। কিন্তু খাবারের মানে পরিবর্তন হয় না, পরিবেশে পরিবর্তন আসে না! বিশ্ববিদ্যালয় কি হলের ডাইনিং বা ক্যাফেতে কোনো ভর্তুকি দেয়? আমি তো মনে করি, কোনোপ্রকার ভর্তুকি ছাড়াই অলাভজনকভাবে ক্যাফে এবং হলের ডাইনিং গুলো চালাতে পারলে খাবারের মান অনায়াসেই উন্নত করা সম্ভব। কিন্তু আপনারা অন্যদের জন্য ব্যবসা করার সুযোগ না দিয়ে থাকতে পারছেন না কেন প্রিয় এডমিনিস্ট্রেটিভ?
২/ একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখে। আমরা বিশ শতাংশ শিক্ষার্থীরাও এই সুবিধাটা পাচ্ছি না। মেসের ভাড়া চুকাতে আমাদের মতো দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কতটুকু পোহাতে হয়, এই খোঁজ কখনো নিয়েছেন? আবাসন সংকট এড়াতে কতটুকু ব্যবস্থা নিয়েছেন? বেশ কিছু দিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট কমাতে নতুন করে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা আপনাদের সম্প্রসারিত পুরো ক্যাম্পাসের বাজেটের প্রায় দিগুণ। এখন আপনারা কম্পেয়ার করা পছন্দ করবেন না। কিন্তু সীমাবদ্ধতার প্রসঙ্গ আসলে ঠিকই তো তুলনা করে বসেন!
৩/ পরিবহন সুবিধার কথা কী আর বলবো! আমরা কেবল কুমিল্লা শহর অব্দি পরিবহন সুবিধা পাই। এই সুবিধাটুকুও কেমন? বাসে গাদাগাদি করে শহরে যেতে হয়। বাসের ফিটনেস নাই এবং প্রিয় এডমিনিস্ট্রিভ তেল খরচের কথা চিন্তা করতে করতে পেরেশান। হা হা। অথচ ঢাকা-চিটাগং রোডে প্রতি সপ্তাহে বাস দেওয়া জুরুরি। বাস সংখ্যা বাড়ানো জরুরি। এখন আবার প্রিয় ছাপড়িরা এসে বলবে, ” ঝুলে ঝুলে না গেলে কীসের ভাসসিডিতে পড়ো?”
৪/ সর্বত্র প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগলেও আমরা জনতারা পড়ে আছি জনতা ব্যাংকের দরোজায়। সেমিস্টার ফী, চিকিৎসা সুবিধা, এনরিচ লাইব্রেরিসহ নানান জায়গায় আমরা বঞ্চনার শিকার৷ এখন আবার সম্প্রসারিত ক্যাম্পাসের কথা তুলবেন? সম্প্রসারিত ক্যাম্পাস ম্যানিপুলেট করার মতো ক্যাপাবিলিটি আদৌ বর্তমান প্রশাসনের আছে? আপনারা অধ্যাপক নিয়োগ দিচ্ছেন না কেন? নতুন ক্যাম্পাস ম্যানিপুলেট করার জন্য কতোটুকু প্রস্তুত? নাকি খাওয়া দাওয়ার জন্য বসে আছেন কেবল? উপাচার্য মহোদয় বললেন, কোটবাড়ি বিশ্বরোড থেকে চার লেনের সড়ক করবেন? কবে করবেন আর!
৫/ মাননীয় এডমিনিস্ট্রেটিভ, যেসব অযোগ্যরা চুরি ও প্রতারণা করে শিক্ষক, কর্মকর্তা হয়েছে; তারা এখনো স্বপদে বহাল থাকতে পারছে কেন? গতকালও নিউজ দেখলাম ভুয়া সনদ দেখিয়ে শিক্ষক হওয়া একজন! আপনারা কেবল তদন্ত কমিটিই গঠন করেন, কিন্তু যেই লাউ, সেই কদু।
৬/ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা প্রতীক আছে, এইটার কোনো ব্যাখ্যা দেন না কেন? কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের লগো থেকে কপি করা লগোটা নিয়ে আপনারা ভাবছেন না কেন? ন্যূনতম এস্থেটিক সেন্স থাকলে, এমনকি কমনসেন্স থাকলেও আপনারা লগোটা নিয়ে ভাবতেন। এইটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা! লজ্জা!
৭/ এখনো পোষ্য কোটা বহাল কেন! মুক্তিযোদ্ধা কোটার আসন মূল আসনের সাথে এটাচ করা হলো না কেন! এজন্যই আবু সাঈদরা বুক পেতে দিয়েছে? যাতে করে আপনারা কোটার মাধ্যমে আপনাদের আদরের দুলালদের ভর্তি করিয়ে জুলুম করতে পারেন দরিদ্র কৃষক – শ্রমিকের উপর!আপনারা যেন কোনোরকমে তলপিতলপা ধরে রাখতে পারলেই বাঁচেন! অগ্রগতির কথা ভাবেন না কেন প্রিয় এডমিনিস্ট্রেটিভ? এতো হীনম্মন্যতা কেন? নাকি স্রেফ মাস শেষে ব্যাংকে পয়সা ঢুকলেই বাঁচেন? সিস্টেমটা এমন হয়েছে যে, দাবি জানিয়ে আন্দোলন না করলে এখন আর প্রাপ্য অধিকারটুকুও আমরা পাই না! আমাদের অযোগ্য প্রশাসনের বিপরীতে আমরা যাতে আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য সচেতন হই। কুকসু গঠন করুন। আমরা সচেতন হবো, যাতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যায়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাবে, যাতে আমাদের রাষ্ট্র হাজার বছর গৌরবের সাথে বেঁচে থাকে।

